গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ছোট পুকুর ছিল। পুকুরটা দিনের বেলায় বেশ সুন্দর লাগত, কিন্তু রাত হলে ওখানে কেউ যেতে সাহস করত না। কারণ সবাই বলত, সেই পুকুরে একটা ভূতের বাস।
একদিন গ্রামের দুই বন্ধু, অমিত আর রাজু, ঠিক করল তারা সেই পুকুরে রাতে গিয়ে দেখবে ভূত আছে কি না। তারা সাহস করে রাতের বেলায় পুকুরের দিকে রওনা হল। পুকুরের কাছে পৌঁছে দেখল, চারপাশ একেবারে নিস্তব্ধ, শুধু কিছু ঝিঁঝির ডাক শোনা যাচ্ছিল।
অমিত বলল, "দেখি, পুকুরে কোনো কিছু ভাসছে কি না।" তারা পুকুরের পাশে গিয়ে বসে রইল। হঠাৎ তারা দেখল, পুকুরের পানিতে একটা সাদা ছায়া ভেসে উঠছে। তারা ভালো করে তাকিয়ে দেখল, সেটি যেন একজন মহিলার আকৃতি।
মহিলাটি ধীরে ধীরে পুকুরের পানি থেকে উঠে আসতে লাগল। অমিত আর রাজু একেবারে ভয় পেয়ে গেল। মহিলার চুলগুলো ভেজা, চোখ দুটি রক্তবর্ণ আর মুখে একটা ভয়ানক হাসি। সে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, "তোমরা এখানে কেন এসেছ?"
অমিত আর রাজু ভয়ে কথা বলতে পারল না। মহিলাটি তাদের কাছে এসে বলল, "আমি এই পুকুরে ডুবে মরে গিয়েছিলাম অনেক বছর আগে। আমার আত্মা এখনো শান্তি পায়নি।"
অমিত সাহস করে বলল, "আমরা তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তুমি কি চাইছ?"
মহিলাটি তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, "আমার আত্মা মুক্তি চাইছে। তোমরা এই পুকুরে একটা পূজা করো, যাতে আমি মুক্তি পাই।"
অমিত আর রাজু রাজি হল। তারা পরের দিন সকালে গ্রামের মন্দিরের পুরোহিতকে সব কিছু জানাল। পুরোহিত তাদের সাহায্য করতে রাজি হলেন। পূজা করার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হল।
রাতে পুকুরের পাশে পুরোহিতের নির্দেশে পূজা শুরু হল। পুকুরের পানিতে ফুল আর প্রদীপ ভাসানো হল। পূজা শেষ হতেই সবাই দেখল, সেই সাদা ছায়া আবার পুকুরের পানি থেকে উঠল, কিন্তু এবার তার মুখে শান্তির হাসি। সে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল।
এরপর থেকে, সেই পুকুরে আর কোনো ভূতের আতঙ্ক ছিল না। গ্রামের লোকেরা পুকুরের পানিতে স্নান করত, মাছ ধরত, আর কোনো ভয়ের অনুভূতি ছিল না। অমিত আর রাজু গ্রামের বীর হিসেবে পরিচিত হল, কারণ তারা সেই ভূতের আত্মাকে মুক্তি দিয়ে গ্রামকে ভয় থেকে মুক্ত করেছিল।
Comments
Post a Comment