ভুতের ঝড়ের রাতে 👀
একবার গ্রীষ্মের একটি রাতে প্রচণ্ড ঝড় উঠেছিল। গ্রামের সবাই তখন নিজেদের ঘরে ছিল, বাইরে কেউ ছিল না। সেই রাতে গ্রামের প্রান্তে একটা ছোট্ট মাটির কুটিরে একা বসবাস করত বৃদ্ধ কৃষ্ণ চরণ। তার বউ আর সন্তানরা বহুদিন আগেই মারা গিয়েছিল, আর সেই থেকে তিনি একাই থাকতেন।
ঝড়ের রাতে কৃষ্ণ চরণ মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে ছিলেন। বাইরে ঝড়ের তাণ্ডব চলছিল, বাতাসের সাথে যেন ভয়ানক আওয়াজ আসছিল। হঠাৎ তার দরজায় জোরে কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলেন।
কৃষ্ণ চরণ ভয় পেলেন। এই রাতে কে আসতে পারে? তিনি দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "কে ওখানে?"
কোনো উত্তর এল না, কিন্তু কড়া নাড়ার শব্দ বন্ধ হল না। অনেক সাহস করে তিনি দরজাটা খুললেন। দরজা খুলতেই দেখলেন, সেখানে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার বয়স হয়তো দশ-বারো বছর হবে। মেয়ে ভিজে একাকার, তার মুখে ভয় আর কষ্টের ছাপ স্পষ্ট।
কৃষ্ণ চরণ তাকে ঘরে এনে বসলেন, জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কে? এত রাতে এখানে কেন?"
মেয়েটি ফিসফিস করে বলল, "আমি হারিয়ে গেছি। আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিন।"
কৃষ্ণ চরণ মেয়েটিকে কিছু খেতে দিলেন এবং বললেন, "আমি তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেব, কিন্তু এই ঝড়ে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। সকালে আমি তোমাকে নিয়ে যাব।"
মেয়েটি মাথা নাড়ল, কিন্তু তার চোখে ভয় আর বিষণ্ণতা লেগে রইল। কৃষ্ণ চরণ রাতে মেয়েটিকে নিজের খাটে শুইয়ে দিলেন আর নিজে মাটিতে শুয়ে পড়লেন।
রাত গভীর হতেই অদ্ভুত কিছু ঘটতে লাগল। কৃষ্ণ চরণ দেখলেন, মেয়েটি শুয়ে থাকা অবস্থায় একেবারে শীতল হয়ে গেছে, তার নিঃশ্বাস চলছেই না। তিনি আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন, কিন্তু সাহস করে মেয়েটিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই দেখলেন, মেয়েটি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
কৃষ্ণ চরণ ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন, দেখলেন, ঝড়ের মধ্যেই এক ছায়া মেয়েটির আকৃতি নিয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন, এই মেয়ে আসলে একটা আত্মা, যে এই ঝড়ের রাতে তার পথ হারিয়ে ফেলে, ফিরে আসার পথ খুঁজছিল।
সকালে গ্রামের লোকেরা যখন কৃষ্ণ চরণের ঘরে এসে পৌঁছাল, তখন তারা তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। গ্রামের বয়স্করা বললেন, "অনেক বছর আগে এই গ্রামেই একটা মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল এবং সে ঝড়ের রাতে মারা গিয়েছিল। সেই মেয়েটির আত্মা এখনো তার বাড়ি খুঁজে ফিরছে।"
এরপর থেকে, ঝড়ের রাতে গ্রামের কেউই বাড়ির বাইরে বের হয় না, আর সবাই দরজা বন্ধ করে দেয়।
Comments
Post a Comment