গ্রামের বাইরে এক প্রাচীন চৌধুরী বাড়ি ছিল। সবাই বলত, বাড়িটা অভিশপ্ত। বহু বছর আগে চৌধুরী পরিবারের একজন সদস্য রহস্যজনকভাবে মারা যান, তারপর থেকেই বাড়িতে অদ্ভুত ঘটনাগুলো শুরু হয়।
একদিন গ্রামে নতুন এক শিক্ষক, রমেশ বাবু, এসে স্থায়ী হলেন। তিনি চৌধুরী বাড়ি সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছিলেন, কিন্তু বিশ্বাস করতেন না। সাহস করে তিনি সেই বাড়িতে এক রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। সবাই তাকে সাবধান করল, কিন্তু তিনি শুনলেন না।
রাতে তিনি নিজের ব্যাগ নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে ঢুকলেন। প্রথমে কিছুই অস্বাভাবিক লাগল না। তিনি একটি ঘরে ঢুকে নিজের বিছানা পেতে শুয়ে পড়লেন। ঘরের দেওয়ালে পুরোনো কিছু ছবি ছিল, যার মধ্যে একজন মহিলার ছবি সবচেয়ে চোখে পড়ছিল। মহিলার মুখে একটি গভীর বিষাদময় অভিব্যক্তি ছিল।
রমেশ বাবু ঘুমানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু ঘুম আসছিল না। হঠাৎ করেই ঘরের মধ্যে ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগল। তিনি জানালা বন্ধ করে দিলেন, কিন্তু ঠান্ডা কমল না। এমন সময় দরজার কাছে কিছু খসখস শব্দ শুনতে পেলেন। তাকিয়ে দেখলেন, একটি ছায়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ছায়াটি ধীরে ধীরে ঘরের মধ্যে ঢুকল। রমেশ বাবু ভয় পেয়ে গেলেন। ছায়াটি ধীরে ধীরে মহিলার আকৃতি নিল। রমেশ বাবু চিনতে পারলেন, এটি সেই মহিলার ছবি যেটি ঘরের দেওয়ালে টাঙানো ছিল।
মহিলা ধীরে ধীরে বললেন, "আমি এই বাড়ির মালকিন। আমাকে আমার পরিবার কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলেছিল। আমার আত্মা এখনো শান্তি পায়নি।"
রমেশ বাবু সাহস করে বললেন, "আমি কীভাবে আপনার আত্মাকে শান্তি দিতে পারি?"
মহিলা বললেন, "আমার প্রতিশোধ নিতে হবে। আমার হত্যার বিচার চাই।"
রমেশ বাবু পরের দিন সকালে গ্রামে গিয়ে চৌধুরী পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে কথা বললেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তিনি জানতে পারলেন, মহিলাকে আসলে তারই স্বামী অত্যাচার করে মেরে ফেলেছিল, এবং সেই স্বামী এখনও বেঁচে আছে, কিন্তু মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে।
রমেশ বাবু এই ঘটনা প্রকাশ্যে আনলেন এবং গ্রামের লোকেরা সিদ্ধান্ত নিল, সেই মানুষটির বিচার হবে। আদালতে বিচার করে সেই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হল এবং শাস্তি পেল।
বিচারের পর রমেশ বাবু চৌধুরী বাড়িতে আবার গেলেন। রাতের বেলায় সেই মহিলার আত্মা আবারও উপস্থিত হল, কিন্তু এবার তার মুখে শান্তির হাসি। তিনি রমেশ বাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, "আমার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে, আমি এখন মুক্ত।"
এরপর থেকে চৌধুরী বাড়িতে আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটেনি। রমেশ বাবু গ্রামের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হলেন, কারণ তিনি একটি অভিশপ্ত আত্মাকে শান্তি দিয়েছিলেন।
Comments
Post a Comment